আজ বিজয় দিবস।
১৬ই ডিসেম্বর ২০২১
প্রায় অনেকগুলো দিন, মাস, বছর কেটে গেল স্বাধীন বাংলাদেশের স্বাধীন নাগরিক হয়ে। বেঁচে আছি আল্লাহর অশেষ কৃপায়। কেমন আছি? এ প্রশ্ন অবান্তর। বেঁচে তো আছি যেভাবেই হোক। স্বাধীন দেশে মাথা উঁচু করে।
কিন্তু জীবনে এমন একটা সময় পার করে এসেছি যে সময়ে প্রতিমুহূর্তে দুর্বিসহ যন্ত্রনা ও ভিন্ন ভিন্ন আশংকা নিয়ে মৃত্যু ভয়ের আতঙ্কে দিন পার করেছি যুদ্ধকালীন পুরো নয় মাস। নিজের সত্তা বলে কিছুই ছিল না।
মনের এই আক্ষেপের কথা গুলো কিন্তু আজকের জন্য নয়।
বিধ্বস্ত লন্ডভন্ড ভঙ্কুর সমাজ ব্যবস্থা নিয়ে দেশটা যখন পরাধীনতার শৃংখলে আবদ্ধ হয়ে মুখ থুবরে পড়েছিল।
ঠিক সেই সময়কার কথা এগুলো। অর্থাৎ
ভয়াল সেই ১৯৭১।
যে একাত্তরে দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে রাত পোহালেই চারিদিকে বিজয়ের আনন্দ উৎসবের ঘনঘটার আবির্ভাব।
সারাদেশ পাক সৈন্যদের দখলমুক্ত হওয়ায় বেরিয়ে পড়ে অবরুদ্ধ জনতা। মুক্তি সৈন্যরা আত্মীয়-স্বজন বাড়িঘর ছেড়ে মুক্তি ক্যাম্প এ আশ্রয় নিয়েছিল তারাও নিজ নিজ বাড়িতে ফিরতে শুরু করে।
চারিদিকে চলে বিজয় উৎসবের আনন্দ উল্লাস।
একদিকে মানুষেরা বিজয়ের আনন্দের অনুপম স্বাদ অনুভব করতে থাকে অন্যদিকে শুন্য ভিটায় ফিরে স্বজন হারানোর বেদনা আর অশ্রুতে’পরিবেশ ভারী হয়ে উঠতে থাকে।
আর আমার আব্বা ও চাচা উনারাও স্বজনদের কাছে বাড়িতে ফিরে আসেন ওই সময়।
১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সাল।
সকাল থেকেই শুরু হয় বিজয় উল্লাস।
আব্দুল্লাহপুর গ্রামের ডাক্তার বাড়িরসেই মুক্তি ক্যাম্প বাংলা ঘরটার সামনে ১৪ই ডিসেম্বরে অগ্রিম উত্তোলিত সেই পতাকাটা আবার নতুন করে উত্তোলন করা হলো।
গ্রামের আশেপাশের মুক্তিযোদ্ধারা দলে দলে অস্ত্রসহ সজ্জিত হয়ে ফাঁকা গুলিবর্ষণ করতে করতে বাংলা ঘরের সামনে এসে জড়ো হতে থাকে।
আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে।
বন্দুকের গুলি ফুটানোর আওয়াজে পাখিরা দিগ্বিদিক জ্ঞানশুন্য হয়ে এদিক ওদিক উড়ছে।
সেদিন মুক্তি বাহিনী দের সাথে আমাদের বাড়ির মুরুব্বি থেকে শুরু করে ছোট বাচ্চারা সবাই এক হয়ে গিয়েছিল। যে যেভাবে পারে ভিন্ন ভিন্ন অস্ত্রের ট্রিগার টিপে টিপে ফাঁকা আকাশে গুলি ফুটায়ে পটকা ফোটানোর আনন্দের মতো উল্লাস করে যাচ্ছে।
আর সে সুযোগ থেকে বাড়ির ভেতরের মহিলারাও বাদ যায়নি। তাদেরও শখ হয়েছে গুলি ফুঁটিয়ে আনন্দ প্রকাশ করার। আর সে সুযোগটা করে দিয়েছে আমার বড় ভাই আরিফুর রহমান। কারণ মহিলারা বাইরের পুরুষদের সামনে বের হন না। তাই বড় ভাই নিজে বেশ কয়েকটা গুলি ফুঁটিয়ে শিখে নিয়ে দাদু, আম্মা সবাইকে ট্রিগারে আংগুল ঢুকিয়ে চেপে চেপে গুলি ফুটায়ে আনন্দ উল্লাস করেছিল।
এ এক বিরল বিজয়ের আনন্দে উদ্ভাসিত মুহূর্ত।
যা আর বিগত ৫০ বছরের ১৬ই ডিসেম্বরে ঘটেনি।
এই ছিল আমাদের সেই প্রথম থেকে শেষ যুদ্ধকালীন সময়ের দুঃখ কষ্ট আনন্দের ইতিহাস।
আজও সেই ইতিহাসের কালের সাক্ষী হয়ে অক্ষত হয়ে আছে আমাদের আব্দুল্লাহপুর গ্রামের সেই
ডাক্তার বাড়ি র বাংলা ঘরটা।
মেয়ের চোখে বাবা বীর মুক্তিযুদ্ধা।
মাসুদা মনোয়ার
মেয়ে
মা মুক্তিযুদ্ধার খেতাব পেয়ে গেল মেয়ের কাছে। কিন্তু বাবা কোথায়? পুরো ঘটনায় বাবার তো কোন ভূমিকাই নেই। খানিকটা চিন্তার বিষয়? আর তাই মেয়ের চোখে বাবাও একজন মুক্তিযোদ্ধা সে বর্ণনা দেওয়ার জন্য আমার এই লেখার আয়োজন।
১৯৭১ সালে আমরা সবাই কুলিয়ারচর ছেড়ে আব্দুল্লাহপুর দাদার বাড়ি আশ্রয় নেই। যুদ্ধের পুরো নয় মাস আমরা সেখানেই থাকি। আর আমার আব্বা একবুক সাহস নিয়ে কুলিয়ারচরে ই থেকে যান। তখন পাক হানাদার বাহিনীর দখলে কুলিয়ারচর সহ পুরো কিশোরগঞ্জ এলাকা।
আব্বার সঙ্গে আমার এক চাচা মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম । উনাকে সঙ্গে নিয়ে দুজনে মিলে কুলিয়ারচরে থেকে সাধারণ রোগীর ভিড়ে মাঝেমধ্যে আর্মি অফিসারদের ও চিকিৎসা করতেন। মনের অনিচ্ছাসত্ত্বেও তার এ কাজ করতে হতো। কারণ উনি সে এলাকার একজন বিশিষ্ট ডাক্তার। মানবতার কঠিন বাস্তবতা তিনি এড়িয়ে যেতে পারেননি।
সুধীজনদের প্রশ্নের সম্মুখীন হলে তিনি বলতেন
মানবিক বিচারে জীবন বাঁচানোর আদর্শের গণ্ডিতে আমি বাধা।
আর এ খবর মুক্তিবাহিনীরা ঠিকই জানতো। কারণ আব্বা ওদের চিকিৎসা এবং আলাপচারিতার মাধ্যমে সুযোগ বুঝে তাদের বিভিন্ন অপারেশনের গোপন তথ্য জেনে নিতেন। পাশাপাশি মুক্তিবাহিনীরাও সাধারণ রোগীর বেশে চেম্বারে আব্বার কাছে বরাবর আসা-যাওয়া করত। প্রায়শই আর্মিদের সাথে মুক্তিদের মুখোমুখি অবস্থান হত।
কি মজার ব্যাপার। দুই শত্রুদল মুখোমুখি। আর এই ব্যাপারটা নিয়ে আব্বা খুব উৎকণ্ঠায় সব সময় ভয়ে তটস্থ থাকতেন। কখন কি ঘটে যায়। ঠিক এভাবেই চলছিল আব্বার সেই সময়ের দিন গুলি।
ঠিক এরইমধ্যে একদিনের ঘটনা বিশেষভাবে বিশেষ করে উল্লেখ করতে হয়।
আব্বারা ছয় ভাই। ৫ নাম্বার মোঃ আতিকুর রহমান। হঠাৎ একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে সবাই দেখে যে সে বাড়িতে নেই। সকাল পেরিয়ে যখন দুপুর হয় হয় তখন দাদু হাতে একটা কাগজ নিয়ে এসে সবাইকে দেখিয়ে বলে ওতো চলে গেছে?
মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিয়েছে। কাগজে লেখা সঙ্গে আরেকজন তার মামাতো ভাই আতাউল্লাহ খান। তাকে নিয়ে দুজনেই ভারতে পাড়ি দিয়েছে।
পুরো বাড়ি শোকে আচ্ছন্ন।দাদা দাদু তো আশাহত হয়ে বিছানা নিয়ে নিয়েছেন। বাড়ির সবার খাওয়া-নাওয়া বন্ধ। থমথমে গুমোট একটা ভাব। কেউ কারো সঙ্গে কোন কথাবার্তা নেই। ঠিক সেই মুহূর্তে তাদের দুজনকে কে কিভাবে খোঁজ নেবে সে ব্যাপারেও অনিশ্চিত। কারণ মানুষ দুজন কার ইশারায় কোন নির্দিষ্ট জায়গায় চলে গিয়েছে জানার কোনও উপায় নাই একমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা করা ছাড়া।
পরে অবশ্য আব্বার মারফতে সবকিছু জানতে পেরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সবার মাঝে স্বাভাবিকতা ফিরে এসেছে।
আমরা সবাই জঙ্গলে। সকাল 10 টা থেকে দুপুর পর্যন্ত ছিলাম। এরমধ্যে আমার ছোট ফুপু সাকেরা বেগম বলে উঠলেন আমি মরবো না? যেভাবেই হোক অন্তত কলাপাতায় পেচিয়ে ঝুলে বেঁচে থাকব। এবং বেচে থেকে দেশ স্বাধীন হলে স্বাধীনতা দেখব। স্বাধীনতা দেখতে কেমন তা উপভোগ করব। পুরো জঙ্গলে আমরা সবাই ছড়ানো-ছিটানো। সহজে কাউকে দেখা যাচ্ছে না। হঠাৎ চোখ ঘুড়াতেই দেখি ছোট্ট একটা ঝুপড়ির নিচে হাঁটু গেড়ে বসে আছেন আমার আম্মা। হাতে একটা কাপড়ের পুটলি। ওটা সামলাতে উনি ব্যস্ত।
পরে জানতে পারলাম ব্যাংক থেকে উঠিয়ে আনা সব টাকা একটা কাপড়ের ব্যাগে তার হাতে। কারণ তখন এই দুঃসময়ে ব্যাংক থেকে টাকা উঠানো খুব বিপদজনক ছিল। টাকার ব্যাপারে পরে আরো জানতে পারলাম আম্মা যে বিছানায় ঘুমাতেন তার পাশেই মাথার কাছে মেঝে খুঁড়ে মাটির নিচে সেই টাকার ছোটখাটো বস্তাটা পুঁতে তারপর ছোট্ট একটা সিন্দুকের মতো বক্স দিয়ে ঢেকে রাখতেন। রোজ গভীর রাতে সবাই ঘুমানোর পর উনি অতি সংগোপনে কাজ সেরে ঘুমোতে যেতেন। সেই টাকার থলেটা জঙ্গলে নিয়ে যেতে ও ভুল করেননি।
আল্লাহর অশেষ রহমতে কি জানি কেন শেষ পর্যন্ত আর আব্বাসহ স্পেশাল মেহমানরা আমাদের বাড়ি বেড়াতে আসেননি। কেন এবং কি কারনে তা আজ ৫০ বছরেও জানতে পারিনি। আলহামদুলিল্লাহ।
স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে সবাই যে যার ঘরে ফিরে আসি।
তবে হ্যাঁ সেদিনের পর একটা ভয়ঙ্কর দুঃসংবাদ জেনেছিলাম যদি আর্মিরা কোন খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে আমাদের বাড়ি চলেই আসতো তাহলে পুরো গ্রাম ঘেরাও দিয়ে জ্বালিয়ে দিত। আল্লাহ মেহেরবান।
আর ঐদিকে কুলিয়ারচরে আমার আব্বার দুশ্চিন্তা আরো দ্বিগুন বেড়ে গেল। একে তো আব্দুল্লাহপুর গ্রামের বাড়িতে মুক্তিদের ক্যাম্প। রাতের আধারে বাড়িতে তাদের আনাগোনা তার উপর স্বয়ং দুই ভাই মুক্তিবাহিনীতে যোগদান। এছাড়াও কুলিয়ারচর বাজারে নিজের অবস্থান ও নিরাপদ নয়। প্রচন্ড আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিয়ে উনার দিন কাটছিল।
ঠিক শেষ সময় হঠাৎ একদিন আমাদের দাদার বাড়ি তে খবর আসে আব্বা কে সঙ্গে নিয়ে কয়েকজন আর্মি ডাক্তার সাহেবের বাড়ি বেড়াতে আসবেন।
এ খবর শুনে বাড়ির সবাই ভয়ে আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে পড়েছিল। নানা ধরনের আশঙ্কা যেমন তাহলে কি আমাদের বাড়ির আসল গোপন খবর কোন রাজাকার বা অন্য কেউ আর্মিদের কানে পৌঁছে দিয়েছে? বাড়ির ছেলেদের মুক্তিবাহিনীতে যোগ দান। আর স্বয়ং আব্বার ব্যাপারটা তো আরো ভয়ঙ্কর?
কিন্তু কোন উপায় নেই। ওদের তো আর এ মুহূর্তে মানা করা যাবে না। আব্বা পড়েছেন মহা বিপাকে।
কি আর করা দিনক্ষণ ঠিক হয়ে গেল। উনারা আসছেন।
আমরা সবাই মনে মনে স্থির করে নিলাম হয় আল্লাহ আমাদের সবাইকে বাঁচাবেন না হয় একসাথে সবাইকে প্রাণে মেরে ফেলবেন।
এ আশঙ্কা নিয়ে আমরা সবাই বাড়ির পাশে বিশাল গহীন জঙ্গল। সে জঙ্গলে আম্মা, ফুফু, চাচীসহ আমরা যে কজন মেয়েরা আছি সবাই হাঁটু গেড়ে ঝোপের নিচে লুকিয়ে ছিলাম। শুধু দাদু বাড়ির ছোট্ট একটা কোঠায় কোরআন শরীফ পড়া অবস্থায় ছিলেন।
মেহমানদের জন্য চা-নাস্তার আয়োজন ও ছিল আব্বার নির্দেশে।
এভাবেই বিভিন্ন সমস্যার উৎকণ্ঠায় কুলিয়ারচর টু আব্দুল্লাহপুর পুরো যুদ্ধকালীন সময় আমরা সবাই মিলে পার করেছিলাম। এরইমধ্যে দুই চাচা মুক্তিসেনার ট্রেনিং শেষ করে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিয়ে একদিন বিকেলে বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়ে। তাদের দুজনের হাতে বিশাল বিশাল লম্বা দুই অস্ত্র এস এল আর।
একরাশ আনন্দ আর বুক ভরা সাহস নিয়ে সবাই একসাথে বড় গলা ছেড়ে বলে উঠলাম জয় বাংলা।
সঙ্গে সঙ্গে শরীরের সবটুকু রক্ত যেন তপ্ত বালুর মত গরম হয়ে গিয়েছিল। এ অনুভূতিটা আজও রক্তের মধ্যে অনুভব করি।
ওইদিকে আমার আব্বা কুলিয়ারচরে তার কর্মকাণ্ড ঠিক একইভাবে চালিয়ে যাচ্ছিলেন আর সে সুবাদে একদিনের এক বড় ধরনের অপারেশনের প্রস্তুতির গোপন তথ্য আর্মিদের আলাপ-আলোচনায় ইঙ্গিত পেয়ে আব্বা আগাম খবর মুক্তিবাহিনীদের জানিয়ে দিয়েছিলেন। আর এতে সেদিনের সেই অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছিল।
কুলিয়ারচর ছেড়ে আর্মিরা বাজিতপুর কোন এক এলাকায় মুক্তিবাহিনীর উপর হামলা করবে গভীর রাতে কিংবা রাতের শেষে। আর্মিদের প্ল্যানটা আগে থেকে জেনে যাওয়ায় মুক্তিদের প্রিপারেশন নিতে অনেক সহজ হয়েছিল।
কুলিয়ারচর ছেড়ে বাজিতপুর যাওয়ার রাস্তা অবরোধ করে মুক্তিরা সন্ধ্যার পর রাতের অন্ধকারে রাস্তা কেটে বিশাল বিশাল গর্ত করে গাছের ডালপালা দিয়ে ঢেকে রেখেছিল। পাকসেনাদের প্রোগ্রাম ছিল রাতের শেষে এজন্য সুবিধা হয়েছিল মুক্তিদের। অন্ধকারে তারা অস্ত্রশস্ত্রসহ গেরিলা অবস্থায় কাছাকাছি প্রস্তুত হয়ে অপেক্ষায় রত । আর ঠিক সেই মুহুর্তে আর্মিদের তিন তিনটা জীপ গাড়ি সেই গর্তে কুপোকাত হওয়ায় মুক্তিরা তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।
উহ্ সারাদিন চলছিল সেই গোলাবারুদের ভয়ঙ্কর গর্জন। মাটি কেঁপে কেঁপে উঠছিল। আমরা আব্দুল্লাহপুর থেকে সেই আওয়াজ স্পষ্ট শুনতে পেয়েছি। পুরোটা দিন ভয়ে আতঙ্কে কেটেছিল।
শেষ রাত থেকে শুরু করে পরদিন সারাদিন চলছিল গেরিলা যুদ্ধ। ভয়ে পুরো গ্রামবাসী জড়োসড়ো সাথে আমরাও। আব্বা ও চাচার জন্য বাড়িতে গুরুজনরা নানা ধরনের চিন্তায় চিন্তিত ও ভয়ে আতঙ্কিত।
কি যে একটা দুর্বিষহ অবস্থা।
একসময় দিনশেষে সন্ধ্যার দিকে যুদ্ধের অবসান ঘটে। এতে ভালোই পাক সেনা মারা যায়। আহত ও হয় বেশ।
মুক্তি শোনাও শহীদ হয় প্রচুর।
আমার মনে হয় সেদিনের সেই গেরিলা যুদ্ধ টা ওই এলাকায় সবচেয়ে বড় একটা যুদ্ধ হয়েছিল।
পরিশেষে আজ স্বাধীন দেশে বাস করে সেই পঞ্চাশ বছর আগের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে শুধু এটুকুই বলতে ইচ্ছে হচ্ছে
একেই কি বলে সত্তিকারের দেশ প্রেম? মানে মাতৃভূমির টান?
এ মুহূর্তে আমার তো মনে হয় আমার আব্বা দেশের জন্য সে সময় যা করেছেন তা নিজের মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী, সন্তানসহ পুরো পরিবারের চেয়েও অনেক অনেক বেশি তার মাতৃভূমির জন্য অকৃত্রিম আত্মত্যাগ।
আমার আব্বা একে তো কুলিয়ারচর বাজারের চতুর্দিকে আর্মিদের ক্যাম্পের চত্বরে থেকে
আর্মি ও মুক্তি এই দুই পক্ষের সাথে যোগসাজশ রেখে বুদ্ধি খাটিয়ে সেই দুঃসময়ের দুর্বিষহ দিনগুলি পার করেছেন।
আর অন্যদিকে আব্দুল্লাহপুর গ্রামের বাড়িতে নিরাপদ আশ্রয় চিন্তা করে নিজের পরিবারকে হেফাজতে রেখে সেখানেও মুক্তিসেনাদের ক্যাম্প বানিয়ে পরিবারের সদস্যদের জড়িত থাকার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি কি একবারও ভাবেন নি তার এই দেশপ্রেমের জন্য তিনি শুধু নিজে নন তার পুরো পরিবার কে কোন এক অজানা ভয়ঙ্কর পাশবিক নির্যাতনের শিকারে পরিনত করতে যাচ্ছিলেন?
তিনি কি দেশপ্রেম এ এতই অন্ধ ছিলেন যে কোন এক আগন্তকের ছোট্ট একটা ইশারায় যেকোনো মুহূর্তে তার এই একচ্ছত্র আধিপত্য চরম নিশংস ভাবে নিঃশেষ হয়ে যেতে পারে? কারণ তখন উনার চারিপাশের এলাকায় মুক্তিদের পাশাপাশি রাজাকার , আলবদর ও শান্তি কমিটির লোকজন রাও ছিল।
সবশেষে আল্লাহর কাছে লাখো কোটি শুকরিয়া আদায় করছি আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে যুদ্ধকালীন পুরো নয় মাস আমরা সবাই সুস্থ ও জীবিত ছিলাম কোনরকম ক্ষতিগ্রস্ত ছাড়া।
বিজয়ের মাস আজ। অপার সুখ ও মহা আনন্দ উৎসবের এই দিনটি হঠাৎ করে একদিনে ই আমাদের জীবনে চলে আসে নি। এই একটি দিনকে মহান বিজয় দিবস বানাতে নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের অবসান ঘটাতে হয়েছিল।
আর তা আমার জীবনে আমি যা স্বচক্ষে দেখেছি আমার বাবা-মা আত্মীয়-স্বজন সরাসরি ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে ভিন্ন ভিন্ন কায়দায় উপস্থিত থেকে মুক্তিযুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। বিশেষ করে আমার আব্বার ভূমিকা আমার চোখে একজন
অসীম দুঃসাহসিক বীর মুক্তিযুদ্ধা।
মাসুদা মনোয়ার
মেয়ে
পিতা- মরহুম ডা: মো: আজিজুর রহমান
Dr. Azizur Rahman
Dr. Azizur rahman
Proposed Dr. Azizur Rahman Foundation
Aenean eu leo quam. Pellentesque ornare sem lacinia quam venenatis vestibulum. Etiam porta sem malesuada magna mollis euismod. Cras justo odio, dapibus ac facilisis in, egestas eget quam.